বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories - Noman Mahmud

Breaking

ads

Jan 19, 2024

বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories

বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories


সুখ মাস্তুল (পর্ব ১)

রয়্যাল প্যালেসের মতো দেখতে ধবধবে সাদা বাড়িটার নেম প্লেটে জ্বলজ্বল করছে 'চৌধুরী ম্যানসন' নামটা। বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে থাকা বিলাসবহুল গাড়িটা থেকে নেমে এলো বয়স চব্বিশের এক অতীব সুন্দরী তরুণী। চোখে মুখে হাসি ও আনন্দ চিকচিক করছে, চোখে তেমনি দম্ভের জাল। হিলের খটখট শব্দে সে বাড়ির অন্দরে প্রবেশ করেই বৈঠকখানায় বসে থাকা বয়স সাতাশের যুবকের গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে পলায় বলল, 'দেখো আয়ান, আমি চলে এসেছি তোমার কাছে'। 'টিয়ারা তুমি এখানো এখন? আয়ান ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো তার প্রেয়সীর দিকে।

টিয়ারা মুচকি হেসে বলল, 'তোমাকে ছাড়া বেশিদিন থাকতে পারি না, বোর হয়ে যাই। তাই চলে এলাম, তোমার কাছেই থাকবো'।

আয়ান উত্তরে কিছু বলতে যাবে ইতিমধ্যে কিছু পড়ার শব্দ হলো। আয়ান চমকে উঠে টিয়ারাকে সরিয়ে দিয়ে সামনে তাকাতে দেখল

একটা বয়স একুশের মেয়ে একসাথে দু'টো তিনাট ব্যাগ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। একটা ব্যাগ তো নামিয়ে রেখেও দিয়েছে। টিয়ারা রুহ্ম স্বরে চিৎকার করে উঠল, 'you fool, তুমি একটা কাজ ঠিক করে করতে পারো না? জানো কত দামী দামী মেকাপের

জিনিস আছে আমার ব্যাগে!!"

মেয়েটাকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়ান উঠে এলো, টিয়ারা কাম ডাউন, এত রাগ করার কিছু নেই। ভারী জিনিস তাই সামলাতে পারেনি হয়তো"।

"তুমি প্লিজ এদের লায় দিও না তো আয়ান, এদের মাথায় চড়ানোর ফল খুব খারাপ হয়' টিয়ারা দন্ত প্রকাশ করলো।

আয়ান মেয়েটার দিকে তাকালো সে ভয়ে মাখা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা বেশ ছোটো, শুধু

উচ্চতায় বেড়ে গেছে। মুখটা এমনিতেই ছোট্ট, এখন তো ভয়ে আরোই মুখটা শুকিয়ে গেছে।

"হাঁ করে দাঁড়িয়ে না থেকে এগুলো নিয়ে উপরে যাও' টিয়ারা ধমকে উঠতে আয়ান বাঁধা দিয়ে বলল, "আমি আমার বাড়ির সার্ভেন্টদের বলছি, ওরা নিয়ে যাবে। তুমি রেখে দাও'।

'ওই নিয়ে যাবে, ও আমার পার্সোনাল সার্ভেন্ট আয়ান। তুমি এসবে ঢুকো না, এই তুমি যাও' টিয়ারার কথায় মেয়েটা মাথা নেড়ে সম্মাতি জানিয়ে চলে গেল সিড়ি দিয়ে উপরে। আয়ান এবার বলল, 'কে এটা? আগে তো কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ছে না।

ও আজই নতুন এসেছে। আসলে ওর বাবা কাজের জন্য কয়েক কোটি টাকা ধার নিয়েছিল, শোধ করতে পারেনি বলে মেয়েকে দিয়ে

দিয়েছে।

-হোয়াট। একজন বাবা হয়ে মেয়েকে দিয়ে দিল?

'শুনেছি দু'টো মেয়ে আছে তাই হয়তো একটাকে দিয়ে দিল। যাক গে, আমাদের কি আমরা ওকে মার্কেটে বেচে অনেক বেশি ভুলে

নেবো। তবে তার আগে কদিন আমার কাজবাজ করুক' টিয়ারা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো।

আয়ান নিশ্চুপ হয়ে রইল কারণ ওর কাছে এসব খুব স্বাভাবিক। ওর জগতটাই অন্ধকারে ঘেরা, এবং ওর পরিচিত সকল মানুষজন এই

অন্ধকার জগতের বাদশা। এই যেমন টিয়ারা'র বাবা রাজেন্দ্র ব্যানার্জী, তিনি দুনম্বরী কাজের বেতাজ বাদশা। তার স্ত্রী এশা দেবীও একাজে স্বামীকে সাহায্য করেন। টিয়ারার দুই দাদা রোদ্দুর ও রিশান বর্তমানে বড় বড় স্মাগলার। আয়ান নিজেও এদের সঙ্গে এসব কাজে জড়িত। আয়ানের অনাথ জীবনের একমাত্র ছাঁদ রাজেন্দ্র বাবু। ছোটো থেকেই আয়ান তার কাছে মানুষ, তাই ওই মানুষটাকে ভগবানের মতো পুজো করে। সে যা বলে তাই আয়ানের জন্য শীরধার্য, যদিওবা মাঝে মধ্যে মনটা খারাপ হয়, এসব কাজ করতে দ্বিধা

বোধ হয় কিন্তু রাজেন্দ্র বাবুর খেয়াল আসলেই কোমল হয়ে আসা মনটা কঠোর হয়ে ওঠে। টিয়ারা আয়ানের হাত জড়িয়ে ধরে উপরে উঠে এলো। আয়ানের ঘরের দিকে যাচ্ছে দেখে আয়ান বাঁধা দিয়ে বলল, 'ওদিকে কোথায়

যাচ্ছ টিয়ারা? তোমার রুম তো

'নো ওয়ে, আমি তোমার সঙ্গে থাকবো। তুমি এবার বাঁধা দেবে না' টিয়ারা আয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলল।

-আমরা বিয়ের পর একসঙ্গে থাকবো, তার আগে নয়। ওকে!! যাও নিজের ঘরে

• একদম নয়, তুমি কেন বোঝো না যে আমি তোমাকে নিজের করে পেতে চাই।

'আমি কোথায় পালিয়ে যাচ্ছি? সময় হলে সব হবে, তবে এখন নয়। যাও আয়ান জোর করে ঠেলে টিয়ারাকে পাঠিয়ে দিয়ে নিজের ঘরে ঢুকলো। দেখল মেয়েটা ব্যাগ গুলো রেখে তার উপরেই বসে পড়েছে, গালে হাত রেখে কি যেন ভাবছে। তবে আয়ানকে দেখে

ধরফড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কোনোরকমে বলল, 'আমি মানে, মানে এমনি

'কাম ডাউন মানে ঠিক আছে এত আয়ানের কথার মাঝে মেয়েটা বলল, 'বাঙলায় ট্রান্সলেট করতে হবে না, আমি ইংরেজি বুঝি'।

আয়ান সোফায় বসে পড়ল, 'রিয়েলি? কি নাম তোমার?"

• সাগরিকা সেন।

- শুভ নেম, কোন ক্লাসে পড়ো?

'ছাড়িয়ে দিয়েছে আর 'সাগরিকার কথার মাঝে টিয়ারা এসে উপস্থিত হলো, 'এই তুমি এখানে কেন? আমার লাগেজ গুলো ঘরে নিয়ে

আসবে কথা। একটা কাজ করতে পারছো না ঠিক করে তাই না? সরি ম্যাম, আমি এখুনি নিয়ে যাচ্ছি। একটা লোকই আমাকে এখানে লাগেজ গুলো আনতে বলেছিল সাগরিকা উত্তর দিতে টিয়ারা

রেগে গিয়ে বলল, 'শাট আপ, তোমার মুখে যেন কথা না ফোটে"।

"টিয়ারা এত হাইপার হওয়ার কি আছে, ও আজ সবে এসেছে। ওকে মানিয়ে নেওয়ার সময় দাও। যাও রুমে গিয়ে রেস্ট নাও, তোমার লাগেজ এখুনি পৌঁছে দেওয়া হবে' আয়ানের কথার উপর কথা না বলে টিয়ারা চলে গেল।

সাগরিকা ব্যাগ গুলো একসাথে তুলতে চাইলে আয়ান বলল, 'একটা একটা করে নিয়ে যাও'।

'লেট হবে এতে, ম্যাম বকবে' বলে সাগরিকা একসঙ্গে কোনো রকমে ব্যাগগুলো তুলে নিয়ে বেরিয়ে চলে গেল। আয়ান দরজার দিকে তাকিয়ে রইল। নিজের মনে ভাবল, "কেমন বাবা যে টাকা দিতে পারেনি বলে মেয়েকে এভাবে দিয়ে দিল। সে কি জানে না এই টুকু

মেয়েটার এরপর কি হবো নিজের সন্তানেরও তোয়াক্কা করে না আজকাল মানুষ?

No comments:

Post a Comment